অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করলেন পরীমণি : কী ঘটেছিল সে রাতে

0
88

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢালিউডের এইসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। নাসির উদ্দিন মাহমুদ নামে এক ব্যাক্তি তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

রোববার রাত ১১ টার পর বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পরীমণি নিজেই।

পরীমনি জানান, বুধবার রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন মাহমুদ নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন। একসময় ওই ব্যক্তি উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কটি সিনেমার মিটিংয়ের কথা বলে অমি নামে এক পূর্বপরিচিত তাকে সেদিন রাতে বোট ক্লাবে নিয়ে যায়।

কান্নায় ভেঙে পড়ে পরীমণি বলেন, ‘বেশ ক’দিন ধরেই এই বৈঠকের কথা চলছিলো। কিন্তু আমি আগ্রহ পাচ্ছিলাম না। পরে অমির অনুরোধে সেদিন রাতে আমি বৈঠকে যাই। যাওয়ার পর যা ঘটেছে সেটা আর বলে বোঝাতে পারবো না।’

তিনি আরও জানান, সেদিন রাতে তাকে পানীয়র সঙ্গে কিছু একটা খাওয়ানো হয়েছিল। কারণ, সারাক্ষণ তিনি প্রচণ্ড অস্থির আর অস্বস্তি বোধ করছিলেন। এরমধ্যে তাকে করতে হয়েছে বাঁচার যুদ্ধ। সেখান থেকে সেদিন রাতে বেরিয়েই পরী যান বনানী থানায়। থানাতে তার অভিযোগ শুনলেও সাধারণ ডায়েরি করেননি কর্তব্যরত অফিসার।

কী ঘটেছিল সে রাতে

কী এমন ঘটেছিল সেদিন, যে চার দিন পরও বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল পরীমনি। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিচার চাইতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে? তাই জানাতে রাত সাড়ে ১০টায় বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের ডেকেছিলেন পরীমনি।

পরীমনি জানান, ১০ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে বাইরে বের হয়েছিলেন তিনি। রাত তখন ১২টা পেরিয়েছে। বন্ধুটি তাঁদের নিয়ে যান আশুলিয়ার একটি ক্লাবে। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি।

ওই ব্যক্তিদেরই একজন হঠাৎ জোর করে তাঁর মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ সময় মারধর করা হয় পরীর সঙ্গে থাকা জিমিকেও।

এ ঘটনায় পরী একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করেছেন। অভিযোগের সত্যতা জানতে বেশ কয়েকবার ওই ব্যক্তির ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তর বক্তব্য না পাওয়ায় তাঁর নাম প্রকাশ করা হলো না।

ঘটনার পরপরই বনানী থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন পরীমনি। তিনি অভিযোগ করেন, সে সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তাঁর অভিযোগ রেকর্ড করেননি। বরং সকালে এসে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।

এ সময় পুলিশের সাহায্যে পরীমনি হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও আতঙ্কবশত চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান। এই ঘটনায় মারাত্মক ভেঙে পড়েছেন পরীমনি। ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

এর আগে ‘আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে’ অভিযোগ করে নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ করেছিলেন ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা পরীমনি।

রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেছেন তিনি। রাতে নিজের বনানীর বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঘটনার প্রকাশযোগ্য বিস্তারিত জানান এই ঢালিউড তারকা।

ফেসবুকে পরীমনি লিখেছেন, ‘আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। এই বিচার কোথায় চাইব? কে করবে সঠিক বিচার?’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মা’ সম্বোধন করে পরীমনি লিখেছেন, ‘চার দিন ধরে থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধুদের কাউকে পাই না মা। যাদেরকে পেয়েছি, সবাই বিস্তারিত ঘটনা জেনে “দেখছি” বলে চুপ হয়ে যায়!’

কোথাও প্রতিকার না পেয়ে পরীমনি লিখেছেন, ‘আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা যদি “আমি মেয়ে”, “লোকে কী বলবে” এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারও কী করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো কি চুপ করে থাকতে পারি, মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’

শৈশবে মা হারানোর ঘটনা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এত দিনে কখনো আমার এক মুহূর্ত মাকে খুব দরকার মনে হয়নি। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে, মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা, আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’

ঘটনা জানতে পরীমনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো সবাইকে বলতেই চাই। ইতিমধ্যে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিকে জানিয়েছি। তারা আমাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমি চার দিন ধরে অপেক্ষা করে আছি, কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করেননি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘পরীমনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিচার চান তিনি।’

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here