এম আবু সিদ্দিক
আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় চরফ্যাশনের এওয়াজপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষ। ধান উপজেলার প্রধান অর্থকারী ফসল হিসেবেও বিবেচিত হলেও কলার ভূমিকাও কম নয়। আর এ কলা চাষে ভাগ্য বদল হচ্ছে চাষিদের। যেখানে অন্যান্য ফসল করে লাভবান হতে পারছে না স্থানীয় চাষিরা; সেখানে কলা চাষ সফলতার হাসি এনেছে এ উপজেলার চাষিদের মুখে। ফলে দিন দিন বাড়ছে কলা বাগানের সংখ্যা। সম্পৃক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন চাষি। একরের পর একর কলা বাগান করে বছর শেষে মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করতে পারায় স্থানীয় অনেক যুবকও পেশা বদলাচ্ছেন। অন্য পেশা ছেড়ে আসছেন কলা চাষে। গত বছর কলার দামে খুশি না হলেও এবার কলার দামে চাষি-ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষ হয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তৃত জমিতে কলার বাগান। পরিচর্যায় ব্যস্ত বাগানের মালিক-শ্রমিকরা। চাষযোগ্য জমির পাশাপাশি পতিত জমিতে করা হয়েছে অসংখ্য বাগান। আর কলা চাষে সফলতার মুখ দেখেছেন চাষিরা। ফলে অন্যের জমি বর্গা নিয়েও অনেকে কলা বাগান করছেন। আবার অনেকে পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির পাশের পতিত জমিতেও বাগান করছেন।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে অনেক বেশি লাভ হয় কলা চাষে। ফলে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এখন কলা চাষ হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উপজেলায় মানিক, চিনিচাম্পা, চাঁপা, অনুপম, মেহের সাগরসহ বিভিন্ন জাতের কলা চাষ করা হয়েছে। এসব জাতের কলাগাছ থেকে অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফসলের চেয়ে কলার দামও বেশি। সাধারণত বৈশাখ মাসে কলার চারা রোপণ করলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে কলা পাওয়া শুরু হয়। যেসব জমিতে বর্ষার পানি সাধারণত এক সপ্তাহের বেশি থাকে না সেসব জমিতে কলা চাষ ভালো হয়। এক বিঘা জমিতে জাত ভেদে সাড়ে ৩ শ থেকে ৪ শ কলার চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। যত্নসহকারে কলা চাষ করলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করতে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ পড়লেও প্রতিবিঘা জমি থেকে কলা বিক্রি হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। যা অন্য কোনো ফসলে সম্ভব নয়। তা ছাড়া কলা বিক্রিতে কোনো ঝামেলা হয় না। পাইকাররা জমি থেকেই কলা কেটে নিয়ে যায়।
উপজেলার এওয়াজপুর গ্রামের কৃষক আশরাফুল বলেন, কলা চাষে লাভের পাল্লাই ভারি থাকে। প্রতিবিঘা জমিতে সাড়ে ৩ শ থেকে ৪ শ কলাগাছ লাগানো যায়। গাছ লাগানো থেকে শুরু করে ১১ মাসের মধ্যে কলা কর্তন করা যায়। এর মধ্যে কলা পাওয়া যায় ৩০০-৩২০টি গাছে। নানা কারণে বাকি গাছগুলো জমিতে টিকে থাকে না। বর্তমানে এক কাঁদি কলা উৎপাদন করতে আমাদের প্রায় ৯০-১০০ টাকা খরচ হয়। একই গ্রামের কৃষক তারেক বলেন, কলার প্রকারভেদে ২২-২৫ হাজার টাকা দরে প্রতি ১ শ কলার কাঁদি বিক্রি হচ্ছে। কলার কাঁদি আগাম পাইকারদের কাছে বিক্রিও করা যায়। এটি কৃষকদের বাড়তি সুবিধা।
উপজেলার রূপনগরের কলা চাষি আশরাদুল বলেন, গড়ে এক বিঘা জমিতে ৭০-৭৫ হাজার টাকার কলা বিক্রি করা যায়। খরচ বাদে লাভ থাকে বিঘাপ্রতি ৩৫-৪০ হাজার টাকা। আমি এবার ২ বিঘা জমিতে কলা লাগিয়েছি। এখনও কলা বিক্রি শুরু করিনি। ফলন দেখে মনে হচ্ছে সব খরচ বাদে কলা বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা আয় আসবে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাগানের ক্ষতি হলে এর পরিমাণ কিছুটা হেরফের হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: আবু হাসনাইন বলেন, উপজেলায় দিন দিন কলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা কলা চাষ করছেন। কলা চাষে কৃষি বিভাগ চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।