নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গ্যাসের সংকট শুরু হয়েছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহের পরিমাণ প্রায় ৪৩ শতাংশ কমে গেছে। আগামী দুই সপ্তাহ ঘাটতি আরও বাড়বে। এরপর ঘাটতি কিছুটা কমতে শুরু করার পূর্বাভাস থাকলেও চাহিদার এক-চতুর্থাংশের জোগান দেয়া শিগ্গির সম্ভব হবে না। পরিস্থিতি সামলাতে কাতার ও ওমান থেকে ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
এদিকে গ্যাসের সংকটে দেশের শিল্প উত্পাদন কমে গেছে। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উত্পাদনসক্ষমতার এক তৃতীয়াংশে নেমে গেছে। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না শিল্প, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানসহ শহর-গ্রামের নাগরিকেরা। উত্পাদনের চাকা ধীর ও বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিবহন খাতে রেশনিং করে সিএনজি সরবরাহ করায় বেড়ে গেছে যাতায়াতের খরচ। হ্রাস পেয়েছে কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সার উত্পাদনও।
গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় ঢাকা মহানগর, সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার বেশির ভাগ শিল্পকারখানা দিনের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকছে। শিল্পকারখানার মালিক ও কর্মকর্তারা বলছেন, পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই (প্রেশার পার স্কয়ার ইঞ্চি) থাকার কথা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে তিন-চার পিএসআই। এতে কারখানা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সক্ষমতা অনুসারে উত্পাদনে না থাকায় তারা আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, নিটিং কারখানাগুলোর সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ঠিক সময়ে পণ্য দিতে না পারার ঝুঁকিতে থাকা রপ্তানিকারকেরা ক্রয়াদেশ বাতিলের আশঙ্কা করছেন।
জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে দৈনিক ৪৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে ২৫০ থেকে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। গত দুই-তিন বছর ধরে দৈনিক ৪১০-৪৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ৩১০-৩৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল। অথচ গত ৯ জানুয়ারি ২৫৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। গত ১৮ নভেম্বর সামিটের এলএনজি টার্মিনালের মুরিং ছিঁড়ে যায়। এতে টার্মিনালটিতে কোনো এলএনজিবাহী কার্গো ভিড়তে পারছে না। এতে দৈনিক প্রায় ৪০-৪৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি মাসের শেষ বা আগামী মাসের শুরুর দিকে এটি ফের চালু না হওয়া পর্যন্ত দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি কমানো যাবে না। এর মধ্যে গতকাল বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে কূপ সংস্কারের জন্য প্রতিদিন ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ২১ জানুয়ারিতে এই সংস্কার শেষ হলে আগের চেয়ে কিছু বেশি গ্যাস পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে গ্যাসের বিদ্যমান সংকটের তীব্রতা চলতি জানুয়ারিতে কমছে না।
পেট্রোবাংলার সাবেক ও বর্তমান একাধিক কর্মকর্তা জানান এবং গ্যাস উত্পাদনের রিপোর্ট বিশ্লেষণেও দেখা যায়, চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি বিবেচনায় এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে তীব্র গ্যাসের সংকট।