বর্ণমালা ভুলতে শুরু করেছে চরফ্যাশনের উপকূলীয় শিশুরা

0
30
পসরা সাজিয়ে মুখরোচক খাবার বিক্রি করছে শিশুরা

শিপু ফরাজী, চরফ্যাশন

মহামারি করনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বর্ণমালা ভুলতে শুরু করেছে চরফ্যাশনের উপকূলীয় শিশুরা। তারা কেউ কেউ ঝড়ে পড়ছে, বেশির ভাগ ঝুঁকে পড়ছে ক্ষুদ্র ব্যবসা, মাছ ধরা ও শিশুশ্রমে।

মাহামারির করোনার কারনে সারাদেশের ন্যায় ১৮ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে চরফ্যাশনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পৌরসভাসহ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে প্রাথমিক পযার্য়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৬২ হাজার ৮ শ ৬ জন। এসব শিক্ষার্থীর ৩০-৪০% উপকূলী।

দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব শিশু বর্ণমালা ভুলে গেছে। আনেক শিশু এখন নিজের নাম লিখতে অপারগতা প্রকাশ করছে। কারণ  ছোট ছোট এই শিশুরা বই, খাতা, কলম ছেড়ে এখন বাবা-চাচার সাথে ধরছে জালের রশি, না হয় নৌকার বৈঠা।

সরকার শিশু শিক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও করোনায় এসব প্রচেষ্টা প্রায় ব্যর্থ চরফ্যাশন উপজেলার জেলে পল্লীতে। এখানকার মেঘনা পাড়ে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে শিশু জেলে। মেঘনার পাড়ের সামরাজ, কচ্ছপিয়া ও চরপাতিলা জেলে পল্লীতে গিয়ে দেখা যায় বেড়ী বাধে ও রাস্তাঘাটে পসরা সাজিয়ে মুখরোচক খাবার বিক্রি করছে শিশু শিক্ষার্থীরা।

অহেতুক ঘোরা ফেরা শিশু শিক্ষার্থীদের

বেড়ী বাধে বাড়ি রাসেলের। আগে সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যেত সে। নিজের অদম্য ইচ্ছায় বাবা স্কুলে ভর্তি করালেও বন্ধ থাকায় স্কুলে যাওয়া হয় না তার । ভর্তি হওয়ার পর স্কুলে বই-কলম নিয়ে যাওয়া-আসা ছাড়া কিছুই শিখতে পারেনি।

শুধু রাসেল একাই নয়, একই অবস্থা সুমন, রিয়াজ, আরীফ, সোহেল ও মিঠুনসহ অনেকের। তাদের সবার বাড়ি চরফ্যাশন উপজেলার চরমানিকা ও চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নে ।

স্থানীয় শিশু সোহেলের বাবা কবির হোসেন জানান, শিশুদের ঘরবন্দি করে রাখা যাচ্ছে না। স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনা ভুলে গেছে। এদের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করলে শিশুরা অন্তত: মূর্খ থাকবে না।

জেলে মো: সিদ্দিক মিয়া বলেন, উপজেলার বেতুয় নদীর পাড়ের নতুন স্লুইজ গেট এলাকায় প্রায় দুইশত ৫০টি ট্রলার রয়েছে। করোনাকালিন সময় প্রতিটি ট্রলারেই দুই থেকে তিন জন করে শিশু জেলে রয়েছে।

কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, করোনা মহামারীতে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ছে। ফলে শিশুশ্রমের দিকে ঝুঁকছে শিশুরা। এতে অভিভাবকরা শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান বলেন, করোনাকালিন সময় ‘চরাঞ্চলের শিশুরা যাতে শিশুশ্রমের দিকে ঝুঁকে না পরে এবং সমাজে স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসতে পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে চরাঞ্চলে গিয়ে করোনা পরবর্তী শিক্ষা বিষয়ে স্থানীয়দের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here