হাস্যোজ্জ্বল শবনম ফারিয়া দর্শকদের প্রীতি কুড়িয়েছিলেন পরিচ্ছন্ন অভিনয়শিল্পী হিসেবে। একারণেই তার বিয়ে নিয়ে মিডিয়া পাড়ায় কোনো রকম নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায়নি। পর্দায় দেখা সুন্দর ইমেজের মানুষটি পারিবারিক জীবনেও বেশ সুখে আছেন তেমটিই ছিল সবার ভাবনায়। কিন্তু করোনা মহামারীর মধ্যে তিনি সবাইকে অবাক করলেন ফেসবুকে সংসার ভাঙ্গার খবর জানিয়ে। বলেছেন, সংসার ভাঙলেও স্বামির সাথে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা অটুট থাকবে।
সমালোচকরা তার শেষের কথাটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন, ভালোবাসার আনুষ্ঠানিক রূপ ‘বিয়ে’ টিকে না থাকলে বন্ধুত্ব টিকে থাকবে কিভাবে? এটা কি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা নাকি লোকজনের সমালোচনা থেকে বাচার পন্থা সেটা নিয়েও কথা উঠছে। তবে ফারিয়া এসবে জবাব দিয়েছেন একটু অন্যভাবে, ‘আমার মা সব সময় একটা কথা বলে, ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি!’ ঠিক সেভাবেই আমি আর অপু অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করেছি একসাথে থাকতে! কিন্তু বিষয়টা একটা পর্যায়ে খুব কঠিন হয়ে যায়। আমরা এ বছরের শুরু থেকেই সিদ্ধান্তে আসি আর একসাথে থেকে কষ্টে থাকতে চাই না। তাই বৈবাহিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে আবারও ৫ বছরের পুরনো বন্ধুত্বে ফিরে গিয়েছি।’
২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া ও বেসরকারি চাকরিজীবী হারুন অর রশীদ অপু। এদিন নৌকায় ভেসে ভেসে পরীর বেশে বিয়ের আসরে হাজির হলেন নববধূ শবনম ফারিয়া! অন্যদিকে একই সময়ে লেকের পাড় ধরে ঘোড়ার গাড়িতে চেপে এলেন বর হারুন অর রশীদ অপু। এমন নান্দনিক বিয়ের আয়োজন এর আগে কোনো শিল্পীকে ঘিরে হয়নি। মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার গভীরে, নয়নাভিরাম ‘জল-জোছনা’য় উন্মুক্ত আকাশের নিচে আয়োজিত হয় এটি।
২০১৫ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে ফারিয়া-অপুর পরিচয় হয়। দুজনের ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়। তিন বছর পর বন্ধুত্বের সীমানা পেরিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আংটি বদল হয় তাদের।
বিচ্ছেদের পর দীর্ঘ এক পোস্টে ফারিয়া লিখেছেন, ‘আমাদের জীবনে কিছু মানুষ আসে। তাদের কেউ কেউ স্থায়ী হয়, কেউ কেউ কিছু কারণে স্থায়িত্ব ধরে রাখতে পারে না। আমার মা সব সময় একটা কথা বলেন, “আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে না, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি!” ঠিক সেভাবেই আমি আর অপু অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দেখলাম, বিষয়টা একপর্যায়ে খুব কঠিন হয়ে যায়। “মানুষ কী বলবে” ভেবে নিজেদের ওপর একটু বেশিই টর্চার করে ফেলছিলাম আমরা। “জীবনটা অনেক ছোট, এত কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার কী দরকার?” ভেবে এ বছরের শুরু থেকেই সিদ্ধান্তে আসি, আমরা আর একসঙ্গে থেকে কষ্টে করতে চাই না। তবু পরস্পরকে বুঝতে বছরখানেক সময় নিয়েছি। ফাইনালি “আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যেই করেন” ভেবে আমরা আমাদের প্রায় আড়াই বছরের বৈবাহিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে আবারও পুরানো বন্ধুত্বে ফিরে গেছি। অপুর জন্যে দোয়া, ভালোবাসা আর শুভকামনা। যে সুখের জন্যে আমরা আলাদা হলাম, আমরা যেন সেই সুখ খুঁজে পাই, সবাই সেই দোয়া করবেন।’
ঘটনাকে অন্যভাবে না ভাবার অনুরোধ জানিয়ে ফারিয়া লিখেছেন, ‘দয়া করে “মিডিয়ার বিয়ে টেকে না” ধরনের কথা বলে আমাদের কারণে আমার অন্য সহকর্মীদের ছোট করবেন না। আমরা সম্পূর্ণ “পারিবারিক কারণে”, পারিবারিকভাবে, পারিবারিক সম্মতিতেই বিয়ের মতো ইনস্টিটিউশন থেকে বের হয়ে এসেছি। আমাদের কখনো ভালোবাসা বা বিশ্বাসের অভাব ছিল না, হবেও না। দুজন মানুষের বিবাহবিচ্ছেদ মানে, দুটো পরিবারের বিচ্ছেদ, অনেক স্মৃতির বিচ্ছেদ। বিচ্ছেদটা কারও জন্য সুখকর অনুভূতি না। তবু আমরা পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে চাই।’