আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তীব্র লড়াই চলছে। এর জেরে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের এপারেও গুলি এসে পড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একইসঙ্গে সীমান্ত দিয়ে নতুন করে রোহিঙ্গা অণুপ্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ডয়চে ভেলে।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, সীমান্তরক্ষীরা অনেক আগে থেকেই সেখানে সতর্ক অবস্থানে আছেন। সরকার পরিস্থিতির ওপর বিশেষ নজর রাখছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান রোববার (২৮ জানুয়ারি) সীমান্তবর্তী এলাকা পরিদর্শন করে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
মিয়ানমানের এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে রোববার ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মিয়ানমানের বিষয়ে নজর রাখছে চীন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত বন্ধ করে অস্ত্রবিরতির জন্য চীন মধ্যস্থতা করছে। রাখাইনে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠা হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আবার আলোচনার পথ সুগম হবে।’
এদিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টারশেল দেশের সীমান্তের মধ্যে এসে পড়ছে। শনিবারও টেকনাফ সীমান্তের এপারে নুরুল ইসলামের বসতঘরে এসে পড়ে ওপার থেকে ছোড়া এলএমজির গুলি। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন ১ নম্বর ওয়ার্ড উলুবনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সীমান্তের মিয়ানমারের ওপার থেকে মর্টারশেল ও ভারি অস্ত্রের গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। হঠাৎ ভারি অস্ত্রের একটা গুলির শব্দ খুব কাছ থেকে শুনতে পাই। তখন দেখি আমার বসতঘরে টিনের দরজা ছিদ্র করে একটি গুলি ঢুকে পড়ে। পরে বিজিবির সদস্যরা খবর পেয়ে তারা এসে গুলিটি নিয়ে যায়।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু বলেন, ‘টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া, তুলাতুলি ও কানজরপাড়া সীমান্তের মিয়ানমারের ওপারে সপ্তাহজুড়ে প্রচুর গোলাগুলি চলছে। ভয়ে আমরা বাড়ি ঘরে থাকতে পারছি না এবং চিংড়ি ঘেরেও যেতে পারছি না। এখন আমাদের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে। অনেকে পরিবার দূরে আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।’
জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, ‘বিভিন্ন ফ্রন্টে বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপের তুমুল প্রতিরোধের কারণে জান্তা সরকার কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি।
বিজিবির টেকনাফ ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।’ রোহিঙ্গা অণুপ্রবেশের কোনো ঘটনা কী এখন পর্যন্ত ঘটেছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেনি। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি।’