নিজস্ব প্রতিবেদক
জরায়ু ক্যানসারের পরিচিতি, এর ভয়াবহতা, লক্ষণ, প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং টিকা নেয়ার সময়সূচি উল্লেখ করে তৈরি করা হয় লিফলেট। রাজধানীর দক্ষিণখানের সেলিনা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের নামে তৈরি করা এই লিফলেট বিতরণ করা হয় পাড়া-মহল্লাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। লিফলেটে প্রতিডোজ ভ্যাকসিনের মূল্য ধরা হয় দুই হাজার ৫০০ টাকা। একই প্রতিষ্ঠানের নামে তৈরি করা অপর লিফলেটে হেপাটাইটিজ-বি (জন্ডিস)-এর পরিচিতি, জন্ডিজের কারণ, এ সংক্রান্ত ভ্যাকসিনের চার্জ ইত্যাদি উল্লেখ করে তৈরি করা হয় আলাদা লিফলেট। রীতিমতো মাইকিং করে বিতরণ করা হচ্ছিল এসব লিফলেট। ইতোমধ্যে প্রতারক চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সেলিনা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মুর্শিদা আক্তার পপি জানান, তারা এ সংক্রান্ত কোনো ভ্যাকসিন দিচ্ছেন না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু সেলিনা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের নামেই নয়। এ রকম আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের নামে চলছিল প্রতারণা। গত তিন বছরে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার নারীকে জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। কেবল গাজীপুর অঞ্চলেই চার হাজার নারীর শরীরে টিকার বদলে দেওয়া হয়েছে শুধুই পানি। এছাড়া জন্ডিসের টিকার সঙ্গে পানি মিশিয়ে আরও দুই হাজার নারীকে দেওয়া হয়েছে নকল টিকা। এভাবে ছয় হাজার নারীর শরীরে নকল ভ্যাকসিন দিয়ে প্রতারক চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত সাড়ে চার কোটি টাকা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘চক্রটি সুনির্দিষ্ট কিছু ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন চালিয়ে জরায়ু ক্যানসারের নকল এই ভ্যাকসিনগুলো বিক্রি করেছে। রাজধানীর অন্তত ১৪৮টি স্কুলে নকল টিকা দেয়া হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছি। যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে এসব টিকা দেয়া হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে প্রতারণার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছে। তারপরও বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই ভয়াবহ প্রতারণার সঙ্গে যাদেরই সংশ্লিষ্টতা থাকুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।